বাংলাদেশে
একটি হিসাব করে দেখা গেছে, কৃষকের বসত ভিটার ৯ বর্গমিটার জায়গায় ৪টি গাছ লাগিয়ে বছরে সর্বোচ্চ তিনটি ফলনের মাধ্যমে ১৬ কেজি আঙ্গুর উৎপাদন করা সম্ভব। লাউ, সীম, কুমড়া এখন বসত ভিটার আঙ্গিনা থেকে বাণিজ্যিকভাবে মাঠ পর্যায়ে চাষ হচ্ছে, অতএব বসত ভিটার ঐ মাচাটি এখন চাইলে আমরা আঙ্গুর মাচায় রূপান্তরিত করতে পারি। সে ক্ষেত্রে প্রয়োজন হচ্ছে কৃষক পর্যায়ে প্রশিক্ষণ, প্রদর্শনী খামার স্থাপন, চারা উৎপাদন, বিতরণ এবং জোর প্রচারণা।
তথ্য সূত্র: শাইখ সিরাজ রচিত ‘মাটি ও মানুষের চাষবাস’ গ্রন্থ থেকে সংগ্রহীত
বাংলাদেশে আঙ্গুর চাষের সম্ভাবনা
বাংলাদেশে আঙ্গুর চাষের সম্ভাবনা প্রবাদ আছে আঙ্গুর ফল টক। আর এ কথাটি আমাদের জন্য বেশ কার্যকর এ কারণে যে এই ফলটি আমরা এদ্দিন ফলাতে পরিনি। পুরোটাই আমদানী করে যেতে হয়। উচ্চমূল্যের কারণে বরাবরই সাধারণের ধরা ছোঁয়ার বইরে থাকে। কখনও কেউ অসুস্থ হলে কিংবা কালেভ্রদ্রে সাধারণ পরিবারে আঙ্গুর খাওয়া হয়। কিন্তু আমদের মাটি ও জলবায়ু আঙ্গুর চাষের জন্য উপযোগী, এটা সমপ্রতি প্রমাণিত হয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দু'চারটি আঙ্গুর গাছ থাকলেও সেটা পরিবারের আওতার মধ্যে সীমাবদ্ধ প্রতিষ্ঠানিক ভাবে আঙ্গুর চাষের চেষ্টা চালানো হয় ১৯৯০ সালে গাজীপুরের কাশিমপুরস্থ বিএডিসি'র উদ্যান উন্নয়ন কেন্দ্রে।
আঙ্গুর চাষের জন্য জমি ও মাটি নির্বাচন
আঙ্গুর চাষের জন্য জমি ও মাটি নির্বাচন দো-আঁশযুক্ত লালমাটি, জৈবিক সার সমৃদ্ধ কাঁকর জাতীয় মাটি এবং পাহাড়ের পাললিক মাটিতে আঙ্গুর চাষ ভাল হয়। জমি অবশ্যই উঁচু হতে হবে যেখানে পানি দাঁড়িয়ে থাকবে না এবং প্রচুর সূর্যের আলো পড়বে এমন জায়গা আঙ্গুর চাষের জন্য নির্বাচন করতে হবে।
জমি তৈরি কিভাবে করবেন
জমি তৈরি কিভাবে করবেন
ভালভাবে চাষ দিয়ে মাটি ঝুরঝুর করবেন তারপর ৭০ × ৭০ × ৭০ সে. মি. মাপের গর্ত করে তাতে ৪০ কেজি গোবর, ৪০০ গ্রাম পটাশ, ৫০০ গ্রাম ফসফেট এবং ১০০ গ্রাম ইউরিয়া গর্তের মাটির সাথে মিশিয়ে ১০/১৫ দিন রেখো দিতে হবে যেন সারগুলো ভালোভাবে মাটির সাথে মিশে যায়। তারপর সংগ্রহীত চারা গোড়ার মাটির বলসহ গর্তে রোপন করে একটি কাঠি গেড়ে সোজা হয়ে ওঠার সুযোগ করে দিতে হবে এবং হালকা পানি সেচ দিতে হবে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আঙ্গুর চারা লাগানোর উপযুক্ত সময় মার্চ-এপ্রিল মাস।
কখন সার প্রয়োগ করবেন
আঙ্গুর যেহেতু লতানো গাছ তাই এর বৃদ্ধির জন্য সময়মতো বাড়তি সার প্রয়োগ করতে হবে। রোপনের ১ মাসের মধ্যে বাড়বাড়তি না হলে গোড়ার মাটি আলগা করে তাতে ৫ গ্রাম ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করা দরকার। ১-৩ বছরের প্রতিটি গাছে বছরে ১০ কেজি গোবর, ৪০০ গ্রাম পটাশ, ৫০০ গ্রাম ফসফেট এবং ১০০ গ্রাম ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে। পটাশ সার ব্যবহারে আঙ্গুর মিষ্টি হয় এবং রোগ বালাইয়ের উপদ্রব কম হয়। গাছ বেড়ে ওঠার জন্য গাছের গোড়ায় শক্ত কাঠি দিতে হবে এবং মাচার ব্যবস্থা করতে হবে- সে মাচাতে আঙ্গুরের শাখা-প্রশাখা ছড়াবে।
গাছের কান্ড ছাঁটাই
রোপনের পরবর্তী বছরের ফেব্রুয়ারী মাসে মাচায় ছড়িয়ে থাকা আঙ্গুর গাছের কান্ড ছাঁটাই করতে হবে। অধিকাংশ খামারিরই প্রশ্ন গাছে ফুল হয় কিন্তু ফল হয় না। এর কারণ কি? কান্ড ছাঁটাই -এর মাধমে আঙ্গুর গাছের ফলন বৃদ্ধি হয় এবং ফুল ঝরে পড়া কমে যায়। ছাঁটাইয়ের ৭ দিন আগে এবং পরে গোড়ায় হালকা সেচ দিতে হয়। গাছ রোপনের পর মাচার ওঠা পর্যন্ত প্রধান কান্ড ছাড়া অন্য সকল পার্শ্বের শাখা ভেঙ্গে ফেলতে হবে।
প্রথম ছাঁটাই মাচায় কান্ড ওঠার ৩৫/৪৫ সে.মি. পর প্রধান কান্ডের শীর্ষদেশ কেটে দিতে হবে যাতে ঐ কান্ডের দুই দিক থেকে দুটি করে চারটি শাখা গজায়।
দ্বিতীয় ছাঁটাই গজানো চারটি শাখা বড় হয়ে ১৫-২০ দিনের মাথায় ৪৫/৬০ সে.মি. লম্বা হবে তখন ৪টি শীর্ষদেশ কেটে দিতে হবে যেখানে থেকে আরও পূর্বের ন্যায় দুটি করে ১৬টি প্রশাখা গজাবে।
তৃতীয় ছাঁটাই এই ১৬টি প্রশাখা ১৫/২০ দিনের মাথায় ৪৫/৬০ সে.মি. লম্বা হবে তখন আবার এদের শীর্ষদেশ কেটে দিতে হবে যাতে প্রতিটি প্রশাখরে দুদিকে দুটি করে ৪টি নতুন শাখা এবং এমনিভাবে ১৬টি শাখা থেকে সর্বমোট ৬৪টি শাখা গজাবে। অবশ্য সর্বক্ষেত্রেই যে ৬৪টি শাখা গজাবে এমন কোনো কথা নেই। এই শাখার গিরার মধ্যেই প্রথমে ফুল এবং পরে এই ফুলমটর দানার মত আকার ধারণ করে আঙ্গুল ফরে রূপান্তরিত হবে। প্রথম বছর ফল পাবার পর শাখাগুলোকে ১৫/২০ সে.মি. লম্বা রেখে ফেব্রুয়ারী মাসে ছেঁটে দিতে হবে ফলে বসন্তের পক্কালে নতুন নতুন শাখা গজাবে এবং ফুল ধরবে। এই পদ্ধতি ৩/৪ বছর পর্যন্ত চলবে এবং ফলের স্থিতি লাভ করবে।
পরিমিত সার এবং উপযুক্ত পরিচর্যার মাধ্যমে একটি আঙ্গুর গাছ না হলেও ৩০ বছর ফলন দিতে পারে। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে প্রতি একরে ৪৩৬টি আঙ্গুর গাছে লাগানো যায় এবং জাতিতে ভিন্নতায় গড়ে প্রতি গাছে প্রতিবছর ৪ কেজি হিসাবে মোট ১৭৪৪ কেজি আঙ্গুর এক একরে উৎপাদন করা সম্ভব।
Comments
Tags
Author
Stats
Published
1945 days ago
Page Views last 24h
0
Total Page Views
11
Revenue
0.0033
Advertisement
Related Posts
Advertisement
Like us on FB!
More Posts
Random Post